মেরূদণ্ডী প্রাণীর শ্রেণিবিন্যাস

অষ্টম শ্রেণি (দাখিল) - বিজ্ঞান - প্রাণিজগতের শ্রেণিবিন্যাস | NCTB BOOK

৯. পর্ব : কর্ডাটা (Chordata)

স্বভাব ও বাসস্থান । এরা পৃথিবীর সকল পরিবেশে বাস করে। এদের বহু প্রজাতি ভাতলার বাস করে। জলচ কর্ডাটাদের মধ্যে বহু প্রজাতি স্বাদু পানিতে অথবা সমুদ্রে বাস করে। বহু প্রজাতি বৃক্ষবাসী, মরুবাসী, মেরুবাসী, গুহাবাসী ও খেচর। কর্ডাটা পর্বের বহু প্রাণী বহিঃপরজীবী হিসেবে অন্য প্রাণীর দেহে সংলগ্ন হয়ে জীবনযাপন করে।

সাধারণ বৈশিষ্ট্য

এই পর্বের প্রাণীর সারা জীবন অথবা স্তূপ অবস্থায় পৃষ্ঠীয়দেশ বরাবর নটোকর্ড অবস্থান করে। নটোকর্ড হলো একটি নরম, নমনীয়, দণ্ডাকার, দৃঢ় ও অখণ্ডায়িত অঙ্গ।

পৃষ্ঠদেশে একক, ফাঁপা স্নায়ুরজ্জু থাকে।

সারা জীবন অথবা জীবন চক্রের কোনো এক পর্যায়ে পার্শ্বীয় গলবিলীয় ফুলকা ছিদ্র থাকে।

   উদাহরণ : মানুষ কুনোব্যাঙ্ক, রুই মাছ

 

কর্ডাটা পর্বকে তিনটি উপপর্বে ভাগ করা যায়। যথা-

 

ক. ইউরোকর্ডাটা (Urochordata)

চিত্র ১. Ascidla

সাধারণ বৈশিষ্ট্য

   • প্রাথমিক অবস্থায় ফুলকারন্দ্র, পৃষ্ঠীয় ফাঁপা স্নায়ুরজ্জু থাকে।

    শুধুমাত্র লার্ভা দশায় এদের লেজে নটোকর্ড থাকে।

      উদাহরণ : Ascidia

 

খ. সেফালোকর্ডাটা (Cephalochordata)

সাধারণ বৈশিষ্ট্য

   • সারাজীবনই এদের দেহে নটোকর্ডের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।

   • দেখতে মাছের মতো।

      উদাহরণ :  Branchiostoma

 

 

গ. ভার্টিব্রাটা (Vertebrata)

এই উপ-পর্বের প্রাণীরাই মেরুদণ্ডী প্রাণী হিসেবে পরিচিত। গঠন ও বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে মেরুদন্ডী প্রাণীদের ৭টি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে।

 

১. শ্রেণি- সাইক্লোস্টোমাটা (Cyclostomata)

এই উপ-পর্বের প্রাণীরাই মেরুদণ্ডী প্রাণী হিসেবে পরিচিত। গঠন ও বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে মেরুদন্ডী প্রাণীদের ৭টি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে।

চিত্র ১-১১ : Petromyzon

সাধারণ বৈশিষ্ট্য

   • ঘাটে দেহ।

   • মুখছিদ্র গোলাকার এবং চোয়াগবিহীন।

   • এদের দেহে পাইল বা যুগ্ম পাখনা অনুপস্থিত।

   • ফুলকাছিদ্রের সাহায্যে শ্বাস নেয়।

      উদাহরন : হাঙ্গর, করাত মাছ, হাতুড়ি মাছ

 

২. শ্রেণি- কনট্ৰক ( Chondrichthyes)

সাধারণ বৈশিষ্ট্য

   • এ পর্বের সকল প্রাণী সমুদ্রে বাস করে।

   • ককাল তরুণাস্থিময়।

   • দেহ প্ল্যাকয়েড আঁইশ দ্বারা আবৃত, মাথার দুই পাশে ৫-৭ ছোড়া ফুলকাচ্ছিদ্র থাকে।

   • কানকো থাকে না।

     উদাহরণ : হাঙ্গর, করাত মাছ, হাতুড়ি মাছ

 

৩. শ্রেণি- টিকবি (Osteichthyes)

সাধারণ বৈশিষ্ট্য

   • অধিকাংশই স্বাদু পানির মাছ।

   • সেই সাইক্রোয়েড, গ্যানয়েড বা টিনয়েড ধরনের আঁইশ দ্বারা আবৃত।

   • মাথার দুই পাশে চার জোড়া ফুলকা থাকে। ফুলকাগুলো কানকো দিয়ে ঢাকা থাকে। ফুলকার সাহায্যে শ্বাসকার্য চালায় ।

      উদাহরণ: ইলিশ মাছ, সি-হর্স

কাজ : লইট্যা, রুচাঁদা, পোয়া, কোৱাশ, কৈ, শিং ও মাদুর মাছ সংগ্রহ করো। এগুলো কোন শ্রেণিভূক্ত মাছ? এদের| বৈশিষ্ট্যগুলো শনাক্ত করো।

 

8. শ্রেণি- উভচর (Amphibia)

মেরুদণ্ডী প্রাণীর মধ্যে যারা জীবনের প্রথম অবস্থায় সাধারণত পানিতে থাকে এবং মাছের মতো বিশেষ ফুলকার সাহায্যে শ্বাসকার্য চালার, পরিণত বয়সে ডালার বাস করে তারাই উভচর।

সাধারণ বৈশিষ্ট্য

   • দেহত্বক আঁইশবিহীন।

   • ত্বক নরম, পাতলা, ভেজা ও গ্রন্থিযুক্ত।

   • শীতল রক্তের প্রাণী।

   • পানিতে ডিম পাড়ে। জীবনচক্রে সাধারণত ব্যাঙাচি দশা দেখা যায়।

   উদাহরণ: সোনাব্যাঙ, কুনোব্যাঙ

 

৫. শ্রেণি- সরীসৃপ (Reptilia)

সাধারণ বৈশিষ্ট্য

   • বুকে ভর করে চলে।

   • ত্বক শুষ্ক ও আঁইশযুক্ত।

   • চার পায়েই পাঁচটি করে নখরযুক্ত পাপ আছে।

      উদাহরণ : টিকটিকি, কুমির, সাপ

 

৬. শ্রেণি পক্ষী (Aves)

সাধারণ বৈশিষ্ট্য

   • দেহ পালকে আবৃত

   • দুটি ডানা, দুটি পা ও একটি চক্ষু আছে।

   • ফুসফুলের সাথে বায়ুথলি থাকায় সহজে উড়তে পারে।

   • উষ্ণ রক্তের প্রাণী।

   • হাড় সক্ত, হাল্কা ও ফাঁপা।

      উদাহরণ: কাক, দোয়েল, হাঁস

 

৭. শ্রেণি- ন্যপায়ী (Mammalia)

সাধারণ বৈশিষ্ট্য   

   • দেহ লোমে আবৃত।

   • স্তন্যপায়ী প্রাণীরা সন্তান প্রসব করে। তবে এর ব্যতিক্রম আছে, যেমন- প্লাটিপাস।

   • উষ্ণ রক্তের প্রাণী।

   • চোয়ালে বিভিন্ন ধরনের দাঁত থাকে।

   • শিশুরা মাতৃদুগ্ধ পান করে বড় হয়।

   • কৎপিণ্ড চার প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট।

      উদাহরণ : মানুষ, উট, বাঘ

কাজ : তোমরা পাঁচজনের একটি করে দল গঠন করো। এবার মেরুদণ্ডী ও অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের চার্ট দেখে এদের বৈশিষ্ট্য নির্ণয় করো ও লিপিবদ্ধ করো। এবার তোমরা শ্রেণিতে উপস্থাপন করো। সকল দলের লেখা বৈশিষ্ট্যের সাথে তোমাদের লেখা বৈশিষ্ট্যগুলো মিলিয়ে নাও।
Content added || updated By
Promotion